Articles

 








১৫৭. আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন: মানুষ আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, অথচ তাদের জন্য এটা উচিৎ নয়। আর মানুষ আমাকে গালি দেয়, অথচ এটা তার জন্য উচিৎ নয়। তাদের আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার অর্থ হলো, তারা বলে, আমি তাদেরকে (মৃত্যুর পরে) জীবিত করে আগের মতো করতে সক্ষম নই। আর তাদের আমাকে গালি দেওয়া হলো, তারা বলে যে, আমার পুত্র আছে। অথচ স্ত্রী বা সন্তান রাখার মতো বিষয় থেকে আমি পবিত্র। (দেখুন: সহীহ আল-বুখারী, ৪র্থ খণ্ড, হাদীস নং ৪১২৪)





﴿بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ وَإِذَا قَضَىٰٓ أَمۡرٗا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ١١٧ ﴾ [البقرة: ١١٧]





১১৭. তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। আর যখন তিনি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেবল বলেন ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়।





﴿وَقَالَ ٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَ لَوۡلَا يُكَلِّمُنَا ٱللَّهُ أَوۡ تَأۡتِينَآ ءَايَةٞۗ كَذَٰلِكَ قَالَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِم مِّثۡلَ قَوۡلِهِمۡۘ تَشَٰبَهَتۡ قُلُوبُهُمۡۗ قَدۡ بَيَّنَّا ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ١١٨ ﴾ [البقرة: ١١٨]





১১৮. আর যারা জানে না, তারা বলে, ‘কেন আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না কিংবা আমাদের কাছে কোন নিদর্শন আসে না’?১৫৮ এভাবেই, যারা তাদের পূর্বে ছিল তারা তাদের কথার মতো কথা বলেছে।১৫৯ তাদের অন্তরসমূহ একই রকম হয়ে গিয়েছে। আমরা তো আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট করে দিয়েছি এমন কাওমের জন্য, যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।১৬০





১৫৮. এখানে পথভ্রষ্টদের দুটি অভিযোগ:





ক. আল্লাহ নিজে এসে তাদের সাথে কথা বলেন না কেন?





খ. তাদের কাছে কোনো নিদর্শন (sign) আসে না কেন?





১৫৯. অর্থাৎ আজকের পথভ্রষ্টরা কোনো নতুন অভিযোগ বা দাবি উত্থাপন করে নি, যা এর আগের বিরোধীরা করেনি। প্রাচীন যুগ থেকে আজ পর্যন্ত পথভ্রষ্টতার স্বরূপ ও প্রকৃতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বার বার একই ধরনের সংশয়, সন্দেহ, অভিযোগ, দাবি ও প্রশ্নের পুনরাবৃত্তিই তারা করে চলছে।





১৬০. প্রথম অভিযোগটি এতো বেশি অর্থহীন যে, তার জবাব দেওয়া অপ্রয়োজনীয়। এখানে শুধু দ্বিতীয় প্রশ্নটির জবাবে বলা হয়েছে, নিদর্শন তো রয়েছে অগণিত, কিন্তু যে মানতেই চায় না, প্রকৃতিগত বক্রতা যাকে গ্রাস করে নিয়েছে, পরম সত্যের প্রতি বিশ্বাস করাকে যে সযত্নে পাশ কাটিয়ে যেতে সদা তৎপর, তারই মুখে একথা মানায়!





﴿إِنَّآ أَرۡسَلۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗاۖ وَلَا تُسۡ‍َٔلُ عَنۡ أَصۡحَٰبِ ٱلۡجَحِيمِ ١١٩ ﴾ [البقرة: ١١٩]





১১৯. নিশ্চয় আমরা তোমাকে প্রেরণ করেছি সত্যসহ, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে১৬১ এবং তোমাকে আগুনের অধিবাসীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না।১৬২





১৬১. অর্থাৎ অসংখ্য নিদর্শনের মধ্যে এক অন্যতম ও উজ্জ্বল প্রতীক হচ্ছেন স্বয়ং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর জীবন ও তাঁর ব্যক্তিত্ব। যে দেশ ও জাতিতে তাঁর জন্ম হয়েছিল তার তৎকালীন অবস্থা, যেভাবে তিনি প্রতিপালিত হন, তাঁর ৪০ বছরের নবুয়তপূর্ব জীবনযাপন এবং নবী হবার পরে তিনি যে মহান, বিষ্ময়কর ও যুগান্তকারী কার্যাবলি সম্পাদন করেন, এসব কিছুই মানুষের জন্য সুস্পষ্ট নিদর্শন।





১৬২. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল-কুরআনের অপর স্থানে আরো বলেন:





﴿وَلَن تَرۡضَىٰ عَنكَ ٱلۡيَهُودُ وَلَا ٱلنَّصَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمۡۗ قُلۡ إِنَّ هُدَى ٱللَّهِ هُوَ ٱلۡهُدَىٰۗ وَلَئِنِ ٱتَّبَعۡتَ أَهۡوَآءَهُم بَعۡدَ ٱلَّذِي جَآءَكَ مِنَ ٱلۡعِلۡمِ مَا لَكَ مِنَ ٱللَّهِ مِن وَلِيّٖ وَلَا نَصِيرٍ ١٢٠ ﴾ [البقرة: ١٢٠]





১২০. আর ইয়াহূদী ও নাসারারা কখনো তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ কর।১৬৩ বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহর হিদায়াতই হিদায়াত’ আর যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর তোমার কাছে যে জ্ঞান এসেছে তার পর, তাহলে আল্লাহর বিপরীতে তোমার কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না।





১৬৩. তাদের অসন্তুষ্টির কারণ এ নয় যে, ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা যথার্থই সত্যসন্ধানী, অথচ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকৃত সত্যকে তাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারেন নি! বরং তাঁর প্রতি তাদের অসন্তুষ্টি এজন্য যে, তারা তাদের ধর্মকে ইচ্ছেমত বিকৃতির মাধ্যমে মুনাফেকী করে যেভাবে লাভবান হয়ে আসছিল; যেভাবে ছল-চাতুরী, প্রতারণা এবং অন্তঃসারশূন্য স্বেচ্ছাচারী প্রদর্শনীমূলক কর্মকাণ্ডকে ধর্ম হিসেবে চালিয়ে আসছিল, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের সে ভ্রষ্টতাগুলোকে উন্মোচন করেন, যাতে তাদের ভীষণ স্বার্থহানী ঘটে এবং তাদেরকে সর্বশেষ আসমানী কিতাব তথা আল-কুরআনের অনুসারী হবার আহ্বান জানান, যার সবই তাদের জন্য ছিল চরম অসহনীয়।





﴿ٱلَّذِينَ ءَاتَيۡنَٰهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ يَتۡلُونَهُۥ حَقَّ تِلَاوَتِهِۦٓ أُوْلَٰٓئِكَ يُؤۡمِنُونَ بِهِۦۗ وَمَن يَكۡفُرۡ بِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ١٢١ ﴾ [البقرة: ١٢١]





১২১. যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছি, তারা তা পাঠ করে যথার্থভাবে। তারাই তার প্রতি ঈমান আনে।১৬৪ আর যে তা অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।





১৬৪. এখানে আহলে কিতাবদের অন্তর্গত কিছু সৎলোকদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তারা সততা ও দায়িত্বশীলতার সাথে আল্লাহর কিতাব পড়ে। তাই আল্লাহর কিতাবের দৃষ্টিতে যা সত্য তাকেই তারা সঠিক বলে মেনে নেয়।





﴿يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتِيَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ وَأَنِّي فَضَّلۡتُكُمۡ عَلَى ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٢٢ ﴾ [البقرة: ١٢٢]





১২২. হে বনী ইসরাঈল,১৬৫ তোমরা আমার নি‘আমতকে স্মরণ কর, যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি। আর নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি সৃষ্টিকুলের ওপর।





১৬৫. বিগত ৫৬-১২১ আয়াতমালায় মহান আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে সম্বোধন করে তাদের ঐতিহাসিক অপরাধসমূহ এবং আল-কুরআন নাযিল হবার সময়ে তাদের যে অবস্থা ছিল, তা পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করেছেন। এখান থেকে আরেকটি ধারাবাহিক বক্তব্য শুরু হচ্ছে, যা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে হলে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:





এক. নূহ আলাইহিস সালামের পরে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম প্রথম নবী ছিলেন। মহান আল্লাহ তাকে ইসলামের শাশ্বত আহ্বান ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছিলেন। প্রথমে তিনি নিজে স্বশরীরে ইরাক থেকে মিশর পর্যন্ত এবং সিরিয়া ও ফিলিস্তীন থেকে নিয়ে আরবের মরু অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান পর্যন্ত বছরের পর বছর সফর করে মানুষকে আল্লাহর আনুগত্যের তথা ইসলামের দিকে আহবান করতে থাকেন। এরপর এ মিশন সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। পূর্ব জর্দানে নিজের ভ্রাতুষ্পুত্র লূত আলাইহিস সালামকে নিযুক্ত করেন। সিরিয়া ও ফিলিস্তীনে নিযুক্ত করেন নিজের পুত্র ইসহাক আলাইহিস সালামকে এবং আরবের অভ্যন্তরে নিযুক্ত করেন নিজের বড় পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে। তারপর মহান আল্লাহর নির্দেশে মক্কায় কাবাগৃহ নির্মাণ করেন এবং আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী এটিকেই এই মিশনের কেন্দ্র গণ্য করেন।





দুই. ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বংশধারা দুটি বড় বড় শাখায় বিভক্ত হয়। একটি হলো ইসমাঈল আলাইহিস সালামের সন্তান-সন্ততিবর্গ। তাঁরা আরবে বসবাস করতেন। কুরাইশ ও আরবের আরো কতিপয় গোত্র এ ধারারই অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর যেসব আরব গোত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশধারাভুক্ত ছিল না তারাও তাঁর প্রচারিত ধর্মে কমবেশী প্রভাবিত ছিল বলে তাঁর সাথেই নিজেদের সম্পর্ক জুড়তো।





দ্বিতীয় শাখাটি ইসহাক আলাইহিস সালামের সন্তানবর্গের। এই শাখায় ইয়াকুব আলাইহিস সালাম, ইউসুফ আলাইহিস সালাম, মূসা আলাইহিস সালাম, দাউদ আলাইহিস সালাম, সুলাইমান আলাইহিস সালাম, ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম, ঈসা আলাইহিস সালাম প্রমুখ অসংখ্য নবী জন্মগ্রহণ করেন। ইতিঃপূর্বেই আমরা জেনেছি, যেহেতু ইয়াকুব আলাইহিস সালামের আরেক নাম ছিল ‘ইসরাঈল’, তাই তাঁর বংশ ‘বনী ইসরাঈল (ইসরাঈল প্রজন্ম)’ নামে পরিচিত হয়।





তিন. ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রধান কাজ ছিল তাওহীদী আদর্শের গোড়াপত্তন করা। তাওহীদাশ্রিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা যারা একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর ইবাদত চর্চার পাশাপাশি অন্যদেরকেও আল্লাহপ্রদত্ত দীন ও আদর্শের প্রতি আহ্বান করবে। এই মহান ও বিরাট কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতেই তাঁকে তাওহীদী জনতার পিতা হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়। তারপর তাঁর বংশধারা থেকে যে শাখাটি বের হয়ে ইসহাক আলাইহিস সালাম ও ইয়াকুব আলাইহিস সালামের নামে অগ্রসর হয়ে ‘বনী ইসরাঈল’ নাম ধারণ করে সেই শাখাটি তাঁর এ দায়িত্বের উত্তরাধিকার লাভ করে। এই শাখায় নবীদের জন্ম হতে থাকে এবং তাঁদেরকে সত্য-সঠিক পথের জ্ঞানদান করা হয়। বিশ্বের জাতিসমূহকে সত্য-সঠিক পথের সন্ধান দেওয়ার উদ্দেশে বনী ইসরাইলকে গঠন করার কার্যক্রম চালু থাকে। তবে দুঃখের ব্যাপার হলো বনী ইসরাঈলের লোকেরা নিজেরাই তাওহীদ ও তাওহীদী আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ব্যাপারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যার ফলে আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলের সাথে তার অঙ্গীকার কর্তন করেন। এবং বনী ইসমাঈল (ইসমাঈল বংশধারায়) এ দায়িত্ব অর্পন করেন। তাওহীদ চর্চা ও বিশ্বময় তাওহীদী আদর্শ প্রচারের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন বনী ইসমাঈলকে আরবের বিরান ভূমিতে রেখে সেসব যোগ্যতা অর্জনের জন্য আল্লাহ তা‘আলা ব্যবস্থা করেন।





নিচের আয়াতগুলোতে ইবরাহীম আলাইসি সালামের তাওহীদ চর্চা, তাওহীদ প্রচার এবং খানায় কাবা পূনঃনির্মাণ, পূনঃনির্মাণের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।





﴿وَٱتَّقُواْ يَوۡمٗا لَّا تَجۡزِي نَفۡسٌ عَن نَّفۡسٖ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يُقۡبَلُ مِنۡهَا عَدۡلٞ وَلَا تَنفَعُهَا شَفَٰعَةٞ وَلَا هُمۡ يُنصَرُونَ ١٢٣ ﴾ [البقرة: ١٢٣]





১২৩. আর তোমরা ভয় কর সেদিনকে, যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না এবং কোনো ব্যক্তি থেকে বিনিময় গ্রহণ করা হবে না আর কোন সুপারিশ তার উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।





﴿وَإِذِ ٱبۡتَلَىٰٓ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ رَبُّهُۥ بِكَلِمَٰتٖ فَأَتَمَّهُنَّۖ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامٗاۖ قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِيۖ قَالَ لَا يَنَالُ عَهۡدِي ٱلظَّٰلِمِينَ ١٢٤ ﴾ [البقرة: ١٢٤]





১২৪. আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমকে তার রব কয়েকটি বাণী দিয়ে পরীক্ষা করলেন,১৬৬ অতঃপর সে তা পূর্ণ করল। তিনি বললেন, ‘আমি তোমাকে মানুষের জন্য নেতা বানাব’। সে বলল, ‘আমার বংশধরদের থেকেও’? তিনি বললেন, ‘যালিমরা আমার ওয়াদাপ্রাপ্ত হয় না’।১৬৭





১৬৬. যেসব কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁকে বিশ্বমানবতার নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত করার যোগ্য প্রমাণিত করেছিলেন কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। সত্যের আলো তাঁর সামনে সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হবার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সমগ্র জীবন ছিল কুরবানী আর ত্যাগের মূর্ত প্রতীক। দুনিয়ার যা কিছুকে মানুষ ভালোবাসতে পারে, এমন প্রতিটি বস্তুকে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সত্যের জন্য কুরবানী করেছিলেন। দুনিয়ার যে সব বিপদকে মানুষ ভয় করে, সত্যের খাতিরে তার প্রত্যেকটিকে তিনি বরণ করে নিয়েছিলেন।





১৬৭. অর্থাৎ এ অঙ্গীকারটি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সন্তানদের কেবলমাত্র সেই অংশটির সাথে সম্পর্কিত যারা সদাচারী, সত্যনিষ্ঠ ও সৎকর্মশীল। তাদের মধ্য থেকে যারা যালিম (অধিকার হরণকারী ও সীমালঙ্ঘনকারী), তাদের জন্য এ অঙ্গীকার নয়। এ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, পথভ্রষ্ট ইয়াহূদীরা ও মুশরিক বনী ইসরাঈলরা এ অঙ্গীকারের আওতায় পড়ে না।





﴿وَإِذۡ جَعَلۡنَا ٱلۡبَيۡتَ مَثَابَةٗ لِّلنَّاسِ وَأَمۡنٗا وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ مُصَلّٗىۖ وَعَهِدۡنَآ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ١٢٥ ﴾ [البقرة: ١٢٥]





১২৫. আর স্মরণ কর, যখন আমরা কা‘বাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম১৬৮ এবং (আদেশ দিলাম যে,) ‘তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর’।১৬৯ আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকূকারী-সাজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর’।১৭০





১৬৯. মাকামে ইবরাহীম সে-ই জান্নাতী পাথর, যার উপর দাঁড়িয়ে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কাবা ঘর নির্মাণ করেছিলেন। জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসের এক পর্যায়ে তিনি বলেন: যখন মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম তাওয়াফ শেষ করেন, তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে জিজ্ঞেস করেন: এটা কি আমাদের পিতার (হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের) মাকাম? তিনি জবাবে বলেন: হ্যাঁ। তারপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবার জিজ্ঞেস করেন: আমরা কি এখানে সালাত পড়বো না? তখন আল-কুরআনের এই আয়াতটি নাযিল হয়:





﴿ وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ مُصَلّٗىۖ﴾ [البقرة: ١٢٥]





“তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান বানিয়ে নাও।”





আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি তিন বিষয়ে আমার রবের সাথে কিংবা আমার রব তিন বিষয়ে আমার সাথে একমত হয়েছেন। এর একটি হচ্ছে, আমি বললাম: ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি যদি মাকামে ইবরাহীমে সালাত পড়তেন’! তখন ঐ আয়াতটি নাযিল হয় যে, তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান বানিয়ে নাও। এটি একটি বড় হাদীসের অংশ বিশেষ। (দেখুন: সহীহ আল-বুখারী, ৪র্থ খণ্ড, হাদীস নং ৪১২৫)





১৭০. পাক-পবিত্র রাখার অর্থ শুধু ময়লা-আবর্জনা থেকে পরিষ্কার রাখা নয়। আল্লাহর ঘরের আসল পবিত্রতা হলো, সেখানে আল্লাহর ছাড়া আর কারোর নাম উচ্চারিত হবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরে বসে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে মালিক, প্রভু, মা‘বুদ, অভাবপূরণকারী বা ফরিয়াদ শ্রবণকারী হিসেবে ডাকে, সে আসলে তাকে নাপাক ও অপবিত্রই করে দেয়।





﴿وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِ‍ۧمُ رَبِّ ٱجۡعَلۡ هَٰذَا بَلَدًا ءَامِنٗا وَٱرۡزُقۡ أَهۡلَهُۥ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ مَنۡ ءَامَنَ مِنۡهُم بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ قَالَ وَمَن كَفَرَ فَأُمَتِّعُهُۥ قَلِيلٗا ثُمَّ أَضۡطَرُّهُۥٓ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلنَّارِۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٢٦ ﴾ [البقرة: ١٢٦]





১২৬. আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম বলল, ‘হে আমার রব, আপনি একে নিরাপদ নগরী বানান এবং এর অধিবাসীদেরকে ফল-মুলের রিয্ক দিন১৭১ যারা আল্লাহ ও আখিরাত দিবসে ঈমান এনেছে’। তিনি বললেন, ‘যে কুফুরী করবে, তাকে আমি স্বল্প ভোগোপকরণ দিব।১৭২ অতঃপর তাকে আগুনের আযাবে প্রবেশ করতে বাধ্য করব। আর তা কত মন্দ পরিণতি’।





১৭১. পবিত্র সেই নগরীতে শান্তি, নিরাপত্তা ও আহার্য নিশ্চিত করে মহান আল্লাহ আল-কুরআনের অন্যত্র বলেন:





১৭২. ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন মানবজাতির নেতৃত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ তালাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জবাবে তাকে বলা হয়েছিল, তার সন্তানদের মধ্য থেকে একমাত্র মুমিন ও সত্যনিষ্ঠরাই এ পদের অধিকারী হবে, যালিমদের এ অধিকার নেই। এখানে তিনি যখন রিযিকের জন্য প্রার্থনা করলেন, তখন আগের ফরমানটিকে সামনে রেখে কেবলমাত্র নিজের মুমিন সন্তান ও বংশধরদের জন্য দোয়া করলেন। কিন্তু এখানে মহান আল্লাহ জানিয়ে দিলেন, সত্যনিষ্ঠ নেতৃত্ব এক কথা, আর রিযিক ও আহার্য দান ভিন্ন বিষয় যা এই দুনিয়ায় মু'মিন ও কাফির নির্বিশেষে সবাইকে দেওয়া হবে। এ থেকে সুস্পষ্ট হয় যে, কারোর অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য দেখে এ ধারণার কারণ নেই যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট আছেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সে-ই নেতৃত্ব লাভের অধিকারী।





﴿وَإِذۡ يَرۡفَعُ إِبۡرَٰهِ‍ۧمُ ٱلۡقَوَاعِدَ مِنَ ٱلۡبَيۡتِ وَإِسۡمَٰعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ١٢٧ ﴾ [البقرة: ١٢٧]





১২৭. স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবার ভিতগুলো উঠাচ্ছিল (এবং বলছিল,) হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবূল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।





﴿رَبَّنَا وَٱجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَيۡنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةٗ مُّسۡلِمَةٗ لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبۡ عَلَيۡنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٢٨ ﴾ [البقرة: ١٢٨]





১২৮. হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত কাওম বানান।১৭৩ আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।





১৭৩. সন্তান-সন্ততির প্রতি মায়া-মমতা শুধুমাত্র স্বভাবগত ও সহজাত প্রবৃত্তিই না; বরং তা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশও বটে। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সন্তানদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন, আর এভাবে প্রার্থনা করার জন্য তিনি মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত হয়েছিলেন। আল-কুরআনের অপর স্থানে তিনি দো‘আ করেন এভাবে:





﴿رَبِّ ٱجۡعَلۡنِي مُقِيمَ ٱلصَّلَوٰةِ وَمِن ذُرِّيَّتِيۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلۡ دُعَآءِ ٤٠ ﴾ [ابراهيم: ٤٠]





“হে আমার রব! আমাকে সালাত কায়েমকারী বানিয়ে দিন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা! আমার দো‘আ কবুল করুন”। (দেখুন: সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪০)





﴿رَبَّنَا وَٱبۡعَثۡ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَيُزَكِّيهِمۡۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١٢٩ ﴾ [البقرة: ١٢٩]





১২৯. হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে১৭৪ এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত১৭৫ শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে।১৭৬ নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।১৭৭





১৭৪. তিলাওয়াতের মূল অর্থ অনুসরণ করা। শব্দটি কুরআন মাজীদ ও অন্যান্য আসমানী কিতাব পাঠ করার ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছে। মানবরচিত কোনো গ্রন্থ পাঠে এ শব্দটি প্রয়োগ করা হয় নি। তাই আল্লাহর কিতাব অনুধাবন-অনুসরণের উদ্দেশ্য ছাড়া শুধু আবৃত্তি করলে তিলাওয়াতের হক আদায় হয় না।





১৭৫. এখানে ‘কিতাব’ বলতে আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ কিতাবকে বুঝানো হয়েছে। আর ‘হিকমাহ’ শব্দ দিয়ে বুঝানো হয়েছে সত্যে উপনীত হওয়া, ন্যায় ও সুবিচার এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ইত্যাদি। পরিভাষাটি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত হলে অর্থ দাঁড়ায় বাস্তব ও অনস্তিত্বের সব বস্তুর পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান এবং অসীম ও সুদৃঢ় উদ্ভাবনী শক্তি। আর অন্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে এর অর্থ হয় বিদ্যমান সব বস্তুর বিশুদ্ধ জ্ঞান এবং সৎকর্ম, ন্যায় ও সুবিচার, সত্য কথা ইত্যাদি। আল-কুরআনে হিকমাহ বলে সুন্নাহকেও বুঝানো হয়ে থাকে।





১৭৬. পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করার অর্থ জীবনকে সত্য, সঠিক ও পরিচ্ছন্ন মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা, আচার-আচরণ, চরিত্র-নৈতিকতা, সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সামগ্রিকভাবে উন্নত দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে সুসজ্জিত করে গড়ে তোলা।





১৭৭. এখানে একথা বুঝানোই উদ্দেশ্য যে, মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব আসলে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঐ দো‘আর প্রতু্ত্তর!





﴿وَمَن يَرۡغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفۡسَهُۥۚ وَلَقَدِ ٱصۡطَفَيۡنَٰهُ فِي ٱلدُّنۡيَاۖ وَإِنَّهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ لَمِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٣٠ ﴾ [البقرة: ١٣٠]





১৩০. আর যে নিজকে নির্বোধ বানিয়েছে, সে ছাড়া কে ইবরাহীমের আদর্শ থেকে বিমুখ হতে পারে? আর অবশ্যই আমরা তাকে দুনিয়াতে বেছে নিয়েছি এবং নিশ্চয় সে আখিরাতে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।





﴿إِذۡ قَالَ لَهُۥ رَبُّهُۥٓ أَسۡلِمۡۖ قَالَ أَسۡلَمۡتُ لِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٣١ ﴾ [البقرة: ١٣١]





১৩১. যখন তার রব তাকে বললেন, তুমি আত্মসমর্পণ কর।১৭৮ সে বলল, 'আমি সকল সৃষ্টির রবের কাছে নিজকে সমর্পণ করলাম।





১৭৮. যে আল্লাহর অনুগত হয়, আল্লাহকে নিজের মালিক, প্রভু ও মা‘বুদ হিসেবে গ্রহণ করে, নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয় এবং দুনিয়ায় তাঁর দেওয়া বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করে, সে-ই মুসলিম। এই বিশ্বাস, প্রত্যয়, দৃষ্টিভঙ্গী ও কর্মপদ্ধতির নাম ‘ইসলাম’। মানব জাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ও জাতিতে যেসব নবী ও রাসূল এসেছেন, এটিই ছিল তাঁদের সবার এক ও অভিন্ন দীন, জীবন পদ্ধতি, আহবান ও মিশন।





﴿وَوَصَّىٰ بِهَآ إِبۡرَٰهِ‍ۧمُ بَنِيهِ وَيَعۡقُوبُ يَٰبَنِيَّ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصۡطَفَىٰ لَكُمُ ٱلدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٣٢ ﴾ [البقرة: ١٣٢]





১৩২. আর এরই উপদেশ দিয়েছে ইবরাহীম তার সন্তানদেরকে এবং ইয়াকূবও১৭৯ (যে,) হে আমার সন্তানেরা, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দীনকে চয়ন করেছেন।১৮০ সুতরাং তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেয়ো না।





১৭৯. বনী ইসরাঈল (ইসরাঈল প্রজন্ম) সরাসরি হযরত ইয়াকূব আলাইহিস সালামের বংশধর হবার কারণে বিশেষভাবে তার নাম এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।





১৮০. ‘দীন’ বিশ্বাস ও আচরণের কিছু মৌলনীতি যার পরিধি ইহলৌকিক জীবনের পুরো অঞ্চল জুড়ে সুবিস্তৃত। দীন আলাদাভাবে উল্লেখ থাকলে দীন ও শরী‘আহ উভয়টাকেই বুঝাবে। আর দীন ও শরিয়া একত্রে উল্লিখিত হলে, দীনের অর্থ হবে মৌলিক বিশ্বাস ও ইবাদত যা সকল তাওহীদী উম্মতকেই পালন করতে হতো। আর শরী‘আহর অর্থ হবে বিধানমালা যা জাতি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হতো।





﴿أَمۡ كُنتُمۡ شُهَدَآءَ إِذۡ حَضَرَ يَعۡقُوبَ ٱلۡمَوۡتُ إِذۡ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعۡبُدُونَ مِنۢ بَعۡدِيۖ قَالُواْ نَعۡبُدُ إِلَٰهَكَ وَإِلَٰهَ ءَابَآئِكَ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗا وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ١٣٣ ﴾ [البقرة: ١٣٣]





১৩৩. নাকি তোমরা সাক্ষী ছিলে, যখন ইয়াকূবের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়েছিল? যখন সে তার সন্তানদেরকে বলল, আমার পর তোমরা কার ইবাদাত করবে? তারা বলল, আমরা ইবাদাত করব আপনার ইলাহের, আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহের, যিনি এক ইলাহ। আর আমরা তাঁরই অনুগত।





﴿تِلۡكَ أُمَّةٞ قَدۡ خَلَتۡۖ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَلَكُم مَّا كَسَبۡتُمۡۖ وَلَا تُسۡ‍َٔلُونَ عَمَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٣٤ ﴾ [البقرة: ١٣٤]





১৩৪. সেটা এমন এক উম্মত যা বিগত হয়েছে। তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের জন্যই, আর তোমরা যা অর্জন করেছ তা তোমাদের জন্যই। আর তারা যা করত সে সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না।





﴿وَقَالُواْ كُونُواْ هُودًا أَوۡ نَصَٰرَىٰ تَهۡتَدُواْۗ قُلۡ بَلۡ مِلَّةَ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ حَنِيفٗاۖ وَمَا كَانَ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ١٣٥ ﴾ [البقرة: ١٣٥]





১৩৫. আর তারা বলে, তোমরা ইয়াহূদী কিংবা নাসারা হয়ে যাও, হিদায়াত পেয়ে যাবে। বল, বরং আমরা ইবরাহীমের মিল্লাতের অনুসরণ করি, যে একনিষ্ঠ ছিল এবং যে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।১৮১





১৮১. এই জবাবটির মর্মার্থ বুঝতে দু’টি বিষয় সামনে রাখা দরকার:





এক. খৃষ্টপূর্ব ৩য়-৪র্থ শতকে ইয়াহূদীবাদ আর ঈসা আলাইহিস সালামের সময়কালের বেশ কিছুকাল পরে খৃষ্টবাদের অভ্যুদয় ঘটে। তাই প্রশ্ন জাগে, ইয়াহূদী বা খৃষ্টবাদ গ্রহণ করাই যদি সঠিকপথ লাভের ভিত্তি হয়, তাহলে এর শত শত বছর আগে জন্মগ্রহণকারী ইবরাহীম আলাইহিস সালামসহ অন্যান্য নবীগণ ও সৎব্যক্তিবর্গ, যাঁদেরকে এরাই সৎপথপ্রাপ্ত বলে স্বীকার করে, তাঁরা সৎপথপ্রাপ্ত হলেন কিভাবে? আসল কথা হলো, বিশ্বব্যাপী যুগে যুগে প্রয়োজন অনুযায়ী মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী-রাসূলদের মাধ্যমেই মানুষ বিশ্বাস ও দিক-নির্দেশনার অভিন্ন উপাদানের ভিত্তিতে চিরন্তন, শাশ্বত ও সহজ-সত্য পথের সন্ধান লাভ করেছে।





দুই. ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের ধর্মগ্রন্থগুলোই ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এক আল্লাহ ছাড়া আর কারোর ইবাদাত-বন্দেগী, উপাসনা-আরাধনা, প্রশংসা ও আনুগত্য না করার সাক্ষ্য দেয়। মহান আল্লাহর গুণ-বৈশিষ্ট্যের সাথে আর কাউকে শরীক না করাই ছিল তাঁর মিশন। কাজেই সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যে চিরন্তন সত্য-সরল একত্ববাদী পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, ইয়াহূদী ও খৃষ্টবাদ তা থেকে সুস্পষ্টভাবে বিচ্যুত হয়েছে। কারণ তাদের উভয়ের মধ্যে ঘটেছে শির্কের প্রকাশ্য মিশ্রণ।





﴿قُولُوٓاْ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيۡنَا وَمَآ أُنزِلَ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَ وَٱلۡأَسۡبَاطِ وَمَآ أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَآ أُوتِيَ ٱلنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمۡ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّنۡهُمۡ وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ١٣٦ ﴾ [البقرة: ١٣٦]





১৩৬. তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের ওপর ও যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানদের ওপর আর যা প্রদান করা হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং যা প্রদান করা হয়েছে তাদের রবের পক্ষ হতে নবীগণকে। আমরা তাদের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত’।১৮২





১৮২. নবীদের মধ্যে পার্থক্য না করার অর্থ হচ্ছে, তাঁদের কেউ সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন আর কেউ তার উপর কায়েম ছিলেন না অথবা কাউকে মানি আর কাউকে মানি না আমরা তাদের মধ্যে এভাবে পার্থক্য করি না। আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সব নবীই যুগে যুগে একই চিরন্তন সত্য ও একই সরল-সোজা পথের দিকে আহ্বান জানিয়েছেন। কাজেই যথার্থ সত্যপ্রিয় কারো পক্ষে সব নবীকে সত্যপন্থী ও সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে মেনে নেওয়াই স্বাভাবিক। যিনি এক নবীকে মানেন আর অন্য নবীকে করেন অস্বীকার, তিনি আসলে যে নবীকে মানেন তাঁরও অনুগামী নন। কারণ মূসা আলাইহিস সালাম, ঈসা আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য নবীগণ যে বিশ্বব্যাপী চিরন্তন সহজ-সত্য পথ দেখিয়েছিলেন তিনি আসলে তার সন্ধান পান নি, বরং তিনি নিছক বাপ-দাদার অনুসরণ করে নিজের পছন্দমত একজন নবীকে মানছেন। তার আসল ধর্ম হয়ে পড়ছে বর্ণবাদ, বংশবাদ অথবা কোনো ভৌগলিক জাতীয়তাবাদ সংক্রমিত এবং বাপ-দাদার অন্ধ অনুসরণ, কোনো নবীর অনুগামিতা নয়।





﴿فَإِنۡ ءَامَنُواْ بِمِثۡلِ مَآ ءَامَنتُم بِهِۦ فَقَدِ ٱهۡتَدَواْۖ وَّإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا هُمۡ فِي شِقَاقٖۖ فَسَيَكۡفِيكَهُمُ ٱللَّهُۚ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ١٣٧﴾ [البقرة: ١٣٧]





১৩৭. অতএব, যদি তারা ঈমান আনে, তোমরা যেরূপে তার প্রতি ঈমান এনেছ, তবে অবশ্যই তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা বিমুখ হয় তাহলে তারা রয়েছে কেবল বিরোধিতায়, তাই তাদের বিপক্ষে তোমার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।১৮৩





১৮৩. মহান আল্লাহ আল-কুরআনের অন্য এক আয়াতে বলেন:





﴿وَٱللَّهُ أَعۡلَمُ بِأَعۡدَآئِكُمۡۚ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَلِيّٗا وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ نَصِيرٗا ٤٥ ﴾ [النساء: ٤٥]





“আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের ভালো করেই জানেন এবং তোমাদের সাহায্য-সমর্থনের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট”। (দেখুন: সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৫)





﴿صِبۡغَةَ ٱللَّهِ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ صِبۡغَةٗۖ وَنَحۡنُ لَهُۥ عَٰبِدُونَ ١٣٨ ﴾ [البقرة: ١٣٨]





১৩৮. (বল,) আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করলাম। ১৮৪ আর রং এর দিক দিয়ে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক সুন্দর? আর আমরা তাঁরই ইবাদাতকারী।





১৮৪. صِبْغَةً ‘সিবগাহ’ শব্দের অর্থ রং বা বর্ণ, colour, dye, stain; পারিভাষিক অর্থে ‘যা ধারণ করা হয়’ বা ‘ধর্ম’ অথবা ‘দীন’ অর্থাৎ religion, creed, doctrine, belief আয়াতটির অর্থ হবে আমরা আল্লহর দীন ইসলামকে ধারণ করলাম।





খ্রিষ্টানদের মধ্যে একটি বিশেষ রীতির প্রচলন ছিল। কেউ তাদের ধর্ম গ্রহণ করলে তাকে গোসল করানো হতো। আর এ গোসলের অর্থ ছিল, তার সব গুনাহ যেন ধুয়ে-মুছে গেলো এবং তার জীবন নতুন এক রং ধারণ করলো। তাদের কাছে এর পারিভাষিক নাম হচ্ছে ‘ইসতিবাগ’ বা ‘রঙ্গীন করা’ (ব্যাপটিজম: debut, launching or initiation)। তাদের ধর্মে যারা প্রবেশ করে কেবল তাদেরকেই ব্যাপটাইজড বা খৃষ্ট ধর্মে রঞ্জিত বলে ধারণা করা হয়। এমনকি খৃষ্টানদের শিশুদেরকেও ব্যাপটাইজড করা হয়।





এ ব্যাপারেই আল-কুরআন বলছে, এ লোকাচারমূলক ‘রঞ্জিত’ হবার যৌক্তিকতা কোথায়? বরং মহান আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গীন হও। যা কোনো পানি দিয়ে হওয়া যায় না; বরং তাঁর বন্দেগীর পথ অবলম্বন করেই এ রঙ্গে রঙ্গীন হওয়া যায়।





﴿قُلۡ أَتُحَآجُّونَنَا فِي ٱللَّهِ وَهُوَ رَبُّنَا وَرَبُّكُمۡ وَلَنَآ أَعۡمَٰلُنَا وَلَكُمۡ أَعۡمَٰلُكُمۡ وَنَحۡنُ لَهُۥ مُخۡلِصُونَ ١٣٩ ﴾ [البقرة: ١٣٩]





১৩৯. বল, তোমরা কি আমাদের সাথে আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করছ অথচ তিনি আমাদের রব ও তোমাদের রব?১৮৫ আর আমাদের জন্য রয়েছে আমাদের আমলসমূহ এবং তোমাদের জন্য রয়েছে তোমাদের আমলসমূহ এবং আমরা তাঁর জন্যই একনিষ্ঠ।১৮৬





১৮৫. ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের পক্ষ থেকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে মুমিনদের সাথে বিবাদ করার কিছু নেই। বরং বিতর্ক যদি করারই থাকে তবে তা হতে পারে মুমিনদের তরফ থেকেই, কেননা তারাই তো মহান আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে ইবাদাতের যোগ্য বানিয়ে নিয়েছে, মুমিনেরা নয়!





১৮৬. অর্থাৎ বিরোধীতাকারীদের কাজের জন্য তারা দায়ী, আর মুমিনদের কাজের জন্য মুমিনরা দায়বদ্ধ। তারা যদি তাদের বন্দেগীকে বিভক্ত করে থাকে এবং অন্য কাউকে আল্লাহর সাথে শরীক করে আরাধনা-উপাসনা ও আনুগত্য করে, তাহলে সে ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরিণাম তাদেরকেই ভোগ করতে হবে। মুমিনরা বলপূর্বক তাদেরকে ঐ কাজ থেকে বিরত রাখতে চায় না। তবে তাঁরা নিজেদের বন্দেগী, আনুগত্য ও উপাসনা-আরাধনা সবকিছুই একমাত্র আল্লাহর জন্যই একমুখী হয়ে নির্দিষ্ট করে নিয়েছে। যদি বিরোধীরা একথা স্বীকার করে নেয় যে, মুমিনদেরও এক আল্লাহর ইবাদাত করার ক্ষমতা ও অধিকার আছে, তাহলে তো সব বিবাদই মিটে যায়!





﴿أَمۡ تَقُولُونَ إِنَّ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَ وَٱلۡأَسۡبَاطَ كَانُواْ هُودًا أَوۡ نَصَٰرَىٰۗ قُلۡ ءَأَنتُمۡ أَعۡلَمُ أَمِ ٱللَّهُۗ وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن كَتَمَ شَهَٰدَةً عِندَهُۥ مِنَ ٱللَّهِۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ١٤٠ ﴾ [البقرة: ١٤٠]





১৪০. নাকি তোমরা বলছ, ‘নিশ্চয় ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাদের সন্তানেরা ছিল ইয়াহূদী কিংবা নাসারা? বল, ‘তোমরা অধিক জ্ঞাত নাকি আল্লাহ’?১৮৭ আর তার চেয়ে অধিক যালিম কে, যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার কাছে যে সাক্ষ্য রয়েছে তা গোপন করে?১৮৮ আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।





১৮৭. ইয়াহূদী ও খৃষ্টান জনতার মধ্যে যারা অজ্ঞতা ও মূর্খতাবশত মনে করত যে, এই বড় বড় মহান নবীদের সবাই ইয়াহূদী অথবা খৃষ্টান ছিলেন, তাদেরকে সম্বোধন করে এখানে একথা বলা হয়েছে।





১৮৮. এখানে সম্বোধন করা হয়েছে ইয়াহূদী ও খৃষ্টান আলেমদেরকে।





﴿تِلۡكَ أُمَّةٞ قَدۡ خَلَتۡۖ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَلَكُم مَّا كَسَبۡتُمۡۖ وَلَا تُسۡ‍َٔلُونَ عَمَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٤١ ﴾ [البقرة: ١٤١]





১৪১. সেটা ছিল একটি উম্মত, যারা বিগত হয়েছে। তারা যা অর্জন করেছে, তা তাদের জন্য আর তোমরা যা অর্জন করেছ তা তোমাদের জন্য। আর তারা যা করত, সে সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না।১৮৯





১৮৯. এ বক্তব্যটি এই সূরার ১৩৪ নং আয়াতের অনুরূপ।





সমাপ্ত



Recent Posts

আল-কুরআনুল কারীমের অর ...

আল-কুরআনুল কারীমের অর্থানুবাদ: প্রেক্ষাপট ও আবশ্যকীয় জ্ঞান 3

আল-কুরআনুল কারীমের অর ...

আল-কুরআনুল কারীমের অর্থানুবাদ: প্রেক্ষাপট ও আবশ্যকীয় জ্ঞান 2

আল-কুরআনুল কারীমের অর ...

আল-কুরআনুল কারীমের অর্থানুবাদ: প্রেক্ষাপট ও আবশ্যকীয় জ্ঞান 1